বাংলা প্রবন্ধ রচনাঃ শ্রীধর আচার্য
শ্রীধর আচার্য
ভূমিকাঃ
শ্রীধর আচার্য (১০ম শতক) সংস্কৃত পন্ডিত ও দার্শনিক। দক্ষিণ রাঢ়ের (বর্তমান হুগলির) ভূরিশ্রেষ্ঠী (ভূরিসৃষ্টি বা ভূরশুট) গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা বলদেব শর্মাও ছিলেন একজন সংস্কৃত পন্ডিত। দক্ষিণ রাঢ়ের রাজা এবং পান্ডুভূমি-বিহারের প্রতিষ্ঠাতা পান্ডুদাস ছিলেন শ্রীধর আচার্যের পৃষ্ঠপোষক।
অধ্যাত্মচিন্তা ও দর্শনবিষয়ক গ্রন্থ রচনা করে শ্রীধর সমগ্র ভারতে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তিনি পান্ডুদাসের আশ্রয়ে থেকে প্রশস্তপাদ রচিত পদার্থধর্মগ্রন্থের টীকা ন্যায়কন্দলী (৯৯১ খ্রি) রচনা করেন। এতে তিনিই প্রথম বৈশেষিক দর্শনের আস্তিক্য ব্যাখ্যা দেন। দর্শনবিষয়ক তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলি: অদ্বয়সিদ্ধি,তত্ত্ববোধসংগ্রহটীকা, শ্রীধরপদ্ধতি (জাতকখন্ডের গ্রন্থ) ইত্যাদি। ত্রিশতিকা (৯৯১ খ্রি) নামক একখানা পাটীগণিত গ্রন্থও তিনি রচনা করেন বলে মনে করা হয়। গ্রন্থটি আর্যাছন্দে রচিত ৩০০ শ্লোকে সম্পূর্ণ। এতে বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের নিয়ম দেওয়া আছে, কিন্তু গোলকের পৃষ্ঠক্ষেত্রফল নির্ণয় নেই। ভাস্করাচার্য নিজগ্রন্থে শ্রীধরের অনেক নিয়ম গ্রহণ করেছেন,কিন্তু শ্রীধরের নমোল্লেখ করেননি। শুধু তাই নয়, তিনি শ্রীধর রচিত বীজগণিতের উল্লেখ করেছেন, যদিও এ সংক্রান্ত কোনো গ্রন্থ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি। শ্রীধর ভট্ট নামে আরও একজন ব্যক্তির নাম জানা যায়, কিন্তু এঁরা একই ব্যক্তি কিনা সে বিষয়ে মতভেদ আছে।
ব্যক্তি জীবন:
তার জন্ম দক্ষিণ রাঢ়ের ভুরিশ্রেষ্ঠ(ভুরশুট) গ্রামে যাকে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী বলে ধারনা করা হয়। পিতার নাম ছিল বলদেব আচার্য এবং মাতার নাম ছিল অচ্ছকা।তার পিতাও একজন সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন।
অবদান:
অবদান:
শ্রীধর দুটি বিখ্যাত গবেষণামুলক বই লেখেনঃ ত্রিশতিকা (পাটীগনিতসার নামেও পরিচিত) এবং পাটীগণিত । তার প্রধান কাজ পাটীগনিতসার কে ত্রিশতিকা বলা হয় কারণ এই বইটিতে তিনশ শ্লোক আছে। এই বইটিতে সংখ্যা গণনা,পরিমাপ,প্রকৃত সংখ্যা,গুন,ভাগ,শুন্য,বর্গ,ঘন ,ভগ্নাংশ,তিন এর নিয়ম বা রুল অফ থ্রি,সুদ হিসাব করা,অংশিদারিত্বের ব্যবসা,ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় সহ গনিতের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। ধারনা করা হয় তিনি অন্তত আরও তিনটি কাজ করেন যেগুলোর নাম বীজগণিত,নবশতি এবং বরাহপতি। দ্বিতীয় ভাস্কর(১১৫০সালের কাছাকাছি) , মাক্কিভট্টের(১৩৭৭সালের কাছাকাছি) এবং রাঘবভট্টের (১৪৯৩ সালে)লেখা থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।
• তিনি ‘শুন্য’ (০) সম্পর্কিত ব্যখ্যা প্রদান করেন।তিনি বলেন, “যদি কোন সঙ্খ্যার সাথে শুন্য যোগ করা হয় তাহলে যোগফল ওই সঙ্খ্যার সমান থাকবে;যদি কোন সংখ্যা থেকে শুন্য বিয়োগ করা হয় তাহলেও ওই সঙ্খ্যার কোন পরিবর্তন হবে না;যদি কোন সঙ্খ্যার সাথে শুন্য গুন করা হয় তাহলে তার ফলাফল শুন্য হবে”। কোন সঙ্খ্যাকে শুন্য দিয়ে ভাগ করলে কি হবে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি। • ভগ্নাংশের ভাগের ক্ষেত্রে তিনি লক্ষ্য করেন ভাজকের সাথে সাথে ভগ্নাংশটিও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
• তিনি বীজগণিত ও পাটিগণিতের ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
• গনিতের ইতিহাসে দ্বিঘাতসহ সমীকরণ সমাধানে তিনি প্রথম কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে একজন।
• তিনি নিচের গানিতিক সূত্রটি প্রতিপাদন করেন
এটি শ্রীধর আচার্যের সমীকরণ নামে পরিচিত। দ্বিঘাত সমীকরণের মাত্রা নির্ণয়ের এই সূত্রটি ‘শ্রীধরাচার্যের উপপাদ্য’ নামেও প্রচলিত।
ليست هناك تعليقات
ملحوظة: يمكن لأعضاء المدونة فقط إرسال تعليق.